নাগাসাকি দিবস (Nagasaki Day): বিশ্ব নাগাসাকি দিবস যা ইতিহাসের পাতায় জ্বলজ্বল করছে। প্রতি বছর ৯ আগস্ট পালন করা হয় যা বিশ্ব ইতিহাসে গভীর তাৎপর্য বহন করে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হওয়ার সাথে সাথে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার মিত্রদের সাথে জাপানের সাথে বিরোধের অবসান ঘটাতে চেয়েছিল।
পারমাণবিক বোমা ব্যবহারের সিদ্ধান্তটি জাপানের আত্মসমর্পণকে ত্বরান্বিত করার এবং দীর্ঘস্থায়ী ব্যয়বহুল আক্রমণ এড়াতে চালিত হয়েছিল। হিরোশিমা আরেকটি জাপানি শহর যেখানে ৬ আগস্ট ১৯৪৫ সালে একটি পারমাণবিক বোমার প্রথম লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করা হয়েছিল।
বোমার কারণে যে ধ্বংস হয়েছিল যা বিশ্বব্যাপী একটা আতঙ্ক সৃষ্টি করেছিল। যার ফলে জাপানের আত্ম সমর্পণের আহ্বান জানানো হয়েছিল। এর তিনদিন পর ৯ আগস্ট ১৯৪৫ সালে নাগাসাকি শহরে আবার দ্বিতীয়বার পারমাণবিক বোমা ফেলা হয়েছিল যার নাম ছিল “ফ্যাট ম্যান”। ফ্যাট ম্যান নামের এই বোমাটি হিরোশিমায় ব্যবহৃত বোমাটির চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী ছিল। বিস্ফোরণ এবং পরবর্তী দাবানল নাগাসাকিতেও ব্যাপক ধ্বংস এবং প্রাণহানি ঘটায়, তার পাশাপাশি পঙ্গু হয়ে বেঁচেছেন অনেকেই।
বোমা বিস্ফোরণে তাৎক্ষণিক প্রভাব:
বোমা বিস্ফোরণ এর সাথে সাথেই নাগাসাকির একটা বড় অংশ ভীষণভাবে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। তাৎক্ষণিকভাবে কয়েক হাজার মানুষ সেখানে মারা যায়। তীব্র তাপ এবং বিকিরণের ফলে বোমা থেকে বেঁচে থাকা ব্যক্তিদের গুরুতর দগ্ধ এবং আহত করে ফেলে, কারো হাত চলে যায় তো কারোর পা চলে যায়, অনেকের মস্তিষ্ক ভীষণভাবে আহত হয়।
বোমা বিস্ফোরণের দীর্ঘমেয়াদী পরিণতি:
বোমা বিস্ফোরণের সাথে সাথে যা ধ্বংস হয়েছিল শুধু সেখানেই থেমেছিল না। নাগাসাকিতে বোমা হামলা থেকে বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিরা “হিবাকুসা” নামে পরিচিত। কেননা ক্যান্সার, জন্মগত ত্রুটি এবং আরো অন্যান্য অসুস্থতা সহ বিকিরণ এক্স প্রজারের কারণে স্থায়ী স্বাস্থ্য সমস্যা সম্মুখীন হয়েছিলেন তাঁরা।
এই শহরটি নিজেই ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে যার ফলে অর্থনৈতিক এবং সামাজিক চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছিল, এখানকার মানুষদের ঘুরে দাঁড়াতে সময় লেগেছে বহু বছর।
বিশ্ব নাগাসাকি দিবস পালন করার তাৎপর্য:
নিরীহ মানুষ থেকে শুরু করে শিশু, নারী, পুরুষ সকলেই বিনা কারণে কোনো রকম যুদ্ধ না চেয়েই প্রাণ হারিয়েছেন এবং পঙ্গু হয়ে বেঁচেছেন। নাগাসাকি দিবসটি তাৎপর্যপূর্ণ, কারণ এটি ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়, যা চিহ্নিত করে থাকে মানবতার এক চরম পরিণতিকে।
পারমাণবিক অস্ত্রের ব্যবহার প্রতিরোধ করতে এবং পারমাণবিক যুদ্ধের হুমকি থেকে মুক্ত বিশ্বকে উন্নত করার জন্য বিশ্বব্যাপী সহযোগিতার প্রয়োজনীয়তাকে বোঝায় এই দিবসটি পালন করাকে। তাছাড়া আমাদের এই ধরনের সংঘাতের মানবিক মূল্যের কথা মনে করিয়ে দেয় এবং আরো শান্তিপূর্ণ ও নিরাপদ বিশ্ব তৈরিতে প্রচেষ্টা করতে উৎসাহিত করে থাকে এই দিবসটি।