Worldwide Bengali Panjika

কল্পতরু উৎসব – Kalpataru Utsav


কল্পতরু উৎসব (Kalpataru Utsav): বাঙালিদের বিভিন্ন উৎসবপূজা পার্বণের পাশাপাশি এমন কিছু উৎসব রয়েছে যা একসময় শুরু হয়েছে কোন মহাপুরুষের বা মহীয়সী নারীর আবির্ভাব দিয়ে বা কারো হাত ধরে যা আজও পর্যন্ত বহন করে বিভিন্ন রকমের আনন্দ ও ঐতিহ্য।

WhatsApp প্রতিদিনের পঞ্জিকা নিজের হোয়াটসঅ্যাপে পেতে এখানে দেখুন (একদম ফ্রী)

১৮৮৬ সালে ১ লা জানুয়ারি কল্পতরু অবতারে অবতীর্ণ হন ঠাকুর শ্রী রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব (Sri Ramakrishna Paramahamsa)। তারপর থেকেই এই শুভ দিনটিকে ‘কল্পতরু উৎসব’ হিসেবেই সকলেই চেনেন। এই উৎসবটি উদযাপিত হয় দক্ষিণেশ্বর কালীবাড়ি, কাশিপুর উদ্যানবাটি থেকে শুরু করে কামারপুকুর মঠ ও মিশনে এবং জয়রামবাটিতে।

কল্পতরু উৎসব হলো এমন একটি হিন্দু উৎসব যা সকল হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের পরিচিত। রামকৃষ্ণ মঠের সন্ন্যাসীবৃন্দ ও রামকৃষ্ণ মিশনের গৃহস্থরা এই উৎসব পালন করে থাকেন সাড়ম্বরে। এছাড়াও বিশ্বব্যাপী বেদান্ত সোসাইটি গুলিতেও এই কল্পতরু উৎসব উদযাপিত হয়।

কল্পতরু কথার অর্থ কি?

কল্পতরু অথবা কল্পবৃক্ষ বা কল্পপাদপ হলো হিন্দু পুরাণ, জৈন ধর্ম এবং বৌদ্ধ ধর্মের একটি ইচ্ছা পূরণকারী ঐশ্বরিক গাছ। সংস্কৃত সাহিত্যে এর উল্লেখ পাওয়া যায়। এছাড়াও এটি জৈন ও বিশ্বতত্ত্ব এবং বৌদ্ধ ধর্মের অন্যতম জনপ্রিয় বিষয়।

এছাড়া এমন কিছু বৃক্ষ যে বৃক্ষ গুলিকে পূজা করা হয় যেমন ধরুন বটবৃক্ষ ভারতের সবচেয়ে পূজনীয় এবং পূজিত গাছগুলির মধ্যে একটি অন্যতম গাছ। দীর্ঘায়ু হওয়ার কারণে এটি ভারতের পৌরাণিক কাহিনী এবং বিভিন্ন পূজা ক্ষেত্রতে কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে। বটবৃক্ষ টি কল্পবৃক্ষ নামেও পরিচিত কারণ এটি ইচ্ছা প্রদান করে এবং অন্যান্য বস্তুগত সুবিধা প্রদান করে বলে মনে করা হয়।

আবার অন্যভাবে কল্পতরু কথার অর্থ হলো “ইন্দ্রলোকের সর্বকামনা পূরণকারী দেবতরু” অর্থাৎ অত্যন্ত উদার ও মুক্ত মনের ব্যাক্তি যিনি সহজেই অন্যের ইচ্ছা পূরণ করেন। তেমনি একজন হলেন সে রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব, তিনি কল্পতরু রূপেই ভক্তদের আশীর্বাদ করেছেন এবং ভক্তদের মনের ইচ্ছা পূর্ণ করেছিলেন।

তো চলুন তাহলে এই জায়গা গুলিতে কল্পতরু উৎসব কিভাবে উদযাপিত হয় সে সম্পর্কে জানা যাক:

কাশিপুর উদ্যানবাটিতে কল্পতরু উৎসব:

কল্পতরু উৎসবকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন জায়গা থেকে ভক্তদের ভিড় চোখে পড়ার মতো। আর এই উৎসব উপলক্ষে মেলা বসে, যেখানে বিভিন্ন ধর্মের মানুষও ভিড় জমিয়ে মেলার আনন্দ উপভোগ করে থাকেন। এই উৎসবে ভোর থেকেই উদ্যানবাটিতে গেটের সামনে অনেক বড় লাইন পড়ে যায়।

দূর থেকে আগত পুণ্যার্থীদের পাশাপাশি পর্যটকরাও থাকেন আর দর্শনার্থীদেরও দেখতে পাওয়া যায়। এই দিন দর্শনার্থীদের লম্বা লাইন কাশিপুর ডাকাত কালীবাড়ি পেরিয়ে গোপাল চ্যাটার্জী রোড ধরে প্রায় রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত পৌঁছে যায় যা সত্যিই দৃষ্টি আকর্ষণ করে।

জয়রামবাটিতে মাতৃ মন্দিরের কল্পতরু উৎসব:

এই উৎসব উপলক্ষে জয়রামবাটি মাতৃমন্দিরে ভক্তদের ঢল নামে। তাছাড়া মায়ের মন্দিরে চলে বিশেষ মঙ্গল আরতি, পূজা পাঠ তার পাশাপাশি আধ্যাত্মিক অনুষ্ঠান। যেহেতু এই উৎসবের যে শুভ দিনটি রয়েছে সেই দিনে ঠাকুর শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব কল্পতরু অবতারে অবতীর্ণ হয়েছিলেন তারপর থেকেই এই বিশেষ দিনটিকে রামকৃষ্ণ ভাবাদর্শে দীক্ষিত মানুষ ও প্রতিষ্ঠানগুলির তরফ থেকে কল্পতরু উৎসব উদযাপন করা হয়।

এর পাশাপাশি বিশ্বাস করা হয় যে, কল্পতরু উৎসবের দিন পরমহংসদেবের কাছে মন থেকে যা চাওয়া হয় সেই ইচ্ছা পূর্ণ হয়। এই উৎসবের পাশাপাশি মাতৃ মন্দিরে সারাদিনভর চলে হোম, যজ্ঞ ও পূজা পাঠ।

হুগলি জেলার কামারপুকুর মঠ ও মিশনে কল্পতরু উৎসব:

একই নিয়ম ও রীতি মেনে কল্পতরু উৎসব পালন করা হয় হুগলির কামারপুকুর মঠ ও মিশনে। এই বিশেষ দিনে বিশেষ পূজা পাঠ হয়ে থাকে। এখানে আজকের এই দিনটিতে ভগবান শ্রী রামকৃষ্ণদেব কাশীপুর উদ্যানবাটিতে কল্পতরু হয়েছিলেন এই সময় এমন একটা ভাব ধারণ করেছিলেন যে, যে যা প্রার্থনা করেছিলেন ধর্ম, অর্থ, কাম, মোক্ষ সবই তিনি দান করেছিলেন।

আর সেই থেকেই আজও পর্যন্ত এই বিশ্বাস চলে আসছে যে, এই শুভদিনে শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের কাছে মন থেকে যা চাওয়া হয় তিনি তা দান করেন।

কল্পতরু উৎসবের সূচনা ও পূজা পাঠ:

মঙ্গল আরতি থেকে চণ্ডীপাঠ, উপাসনা গীতি আলেখ্য নানা আয়োজন হয় শ্রীরামকৃষ্ণের কল্পতরু উৎসবে। এই দিন ভোরে মঙ্গল আরতি দিয়ে উৎসবের সূচনা হয়। এরপর রামকৃষ্ণের উপাসনা, চণ্ডীপাঠ, ভক্তিগীতি এই সবকিছু চলতে থাকে, বিকেল প্রায় তিনটে পর্যন্ত উপাসনা চলতে থাকে।

ভোর বেলায় আশ্রমে মঙ্গল আরতি, বৈদিক মন্ত্র ও গীতা পাঠ ছাড়াও শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের বিশেষ পূজার আয়োজন করা হয়। কল্পতরু উৎসব উপলক্ষে সারাদিন ধরে রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনে প্রচুর ভক্ত হাজির হন ও ঠাকুরের প্রসাদ গ্রহণ করেন।জীবজন্তু সহ সকল মানুষকে তিনি অভয় প্রদান করেছিলেন।

কেবলমাত্র শুধু এই কল্পতরু উৎসবের দিনটিই নয়, সারা বছর ধরেই আমাদের সকলের কাছে কল্পতরু হিসেবেই তিনি বিরাজমান। তিনি সর্বদাই সকলকে আশীর্বাদ করে যাচ্ছেন এবং ধর্ম, অর্থ, মুক্তি সমস্ত দান করে যাচ্ছেন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!