Worldwide Bengali Panjika

ইতু পূজার ব্রত কথা – Itu Puja Vrat Katha


ADVERTISEMENT

ইতু পূজার ব্রত কথা (Itu Puja Vrat Katha): প্রতিটি ব্রত পালন করতে গেলে যেমন সেই ব্রত পালন করার পাশাপাশি উপবাস রেখে পূজা সম্পন্ন করার সাথে সাথে ব্রত কথা পাঠ করতে হয় সেই পূজার, তেমনি গ্রাম বাংলার এই লোকউৎসব ইতু পূজার ব্রত কথাও জেনে রাখা খুবই দরকার।

মাটির সরাতে দেওয়া হয় পাঁচ রকমের কলাই মাটি দিয়ে পঞ্চ শস্য ও ছড়িয়ে দেন অনেকেই। অগ্রহায়ণ সংক্রান্তির দিন ইতুর ব্রত উদযাপন করে নদী অথবা পুকুরে ইতু ভাসিয়ে দেওয়ার প্রথা প্রচলিত রয়েছে। আজও বিশ্বাস করা হয় যে ইতু ব্রত পালন করলে সংসারে সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি ভরে ভরে ওঠে।

ইতু পুজোর লৌকিক গল্প অথবা ব্রতকথা:

“অষ্ট চাল অষ্ট দূর্বা কলসপত্র ধরে, ইতু কথা এক মনে শুনো প্রাণ ভরে।”

গ্রাম বাংলার যে সমস্ত মা ও বোনেরা অর্থাৎ ঠাকুমা দিদারা যাঁরাই এই ব্রত পালন করে থাকুন না কেন তাঁরা অবশ্যই এই দুটি লাইনের মাহাত্ম্য বুঝবেন এবং এই দুটি লাইন তাঁদের কাছে খুবই চেনা মনে হবে। গ্রাম বাংলার মাতৃ জাতির কাছে এই লাইন দুটি বেশ জনপ্রিয়। প্রত্যেক বাঙালি ব্রত কথায় কোনো না কোনো লৌকিক গল্প অবশ্যই থাকে, ইতু পূজার ব্রত কথাতে এমন একটি গল্প রয়েছে যা এই পূজার ব্রতকথা হিসেবে অনেকেই পাঠ করে থাকেন অথবা শ্রবণ করে থাকেন।

ইতু পূজা ও ব্রত পালন বিধি ও ইতু পূজা মন্ত্র

ইতু পূজার ব্রত কথা:

তাহলে জানা যাক সেই লৌকিক গল্প অথবা ব্রত কথা সম্পর্কে:

প্রাচীনকালে এক সময় এক দরিদ্র ব্রাহ্মণ ও তার স্ত্রী ও দুই মেয়েকে নিয়ে অভাবের সংসারে কোনরকমে দিনযাপন করতে থাকে। ব্রাহ্মণের পেশা ছিল ভিক্ষাবৃত্তি অর্থাৎ প্রতিদিন ভিক্ষা করে যতটুকু উপার্জন হত ততটুকু দিয়েই তাদের প্রতিদিনের আহার চলত। ব্রাহ্মণ পিঠে খেতে খুব ভালোবাসতো, ভিক্ষা করে চাল, নারিকেল, গুড় এনে দিলে তার স্ত্রীকে পিঠে বানানোর জন্য অনুরোধ করে। যেন কাউকে না দেওয়া হয় তার স্ত্রীকে এই শর্ত দিয়ে ব্রাহ্মণ লুকিয়ে পড়ে।

পিঠে ভাজার শব্দ শুনতে শুনতে ব্রাহ্মণ দড়িতে একটা করে গিট দিতে থাকে এরপর তার স্ত্রী ব্রাহ্মণকে পিঠে খেতে দিলে ব্রাহ্মণ দড়ির সেই গিট দেওয়া গুলি গুনে গুনে দেখতে থাকে যে পিঠে ঠিক আছে কিনা। অবশেষে সব দেখে দেখা যায় যে দুটো পিঠে কম রয়েছে। ব্রাহ্মনের রাগ চরম পর্যায়ে চলে যায়, ব্রাহ্মণের রাগ দেখে তার স্ত্রী বলল দুই মেয়েকে দুটো পিঠে খেতে দিয়েছি। এই কথা শুনে ব্রাহ্মণ তার দুই মেয়েকে তাদের মাসির বাড়ি রেখে আসবে বলে জানায়, মেয়ে দুটির নাম উমনো আর ঝুমনো।

পরের দিন ভোরবেলা উমনো আর ঝুমনোকে সঙ্গে করে ব্রাহ্মণ বাড়ি থেকে রওনা হয়। সারাদিন হাঁটতে হাঁটতে তারা এক জঙ্গলের মধ্যে পৌঁছায়। সেখানেই সন্ধ্যা নেমে আসে। ব্রাহ্মণ তাদের ঘুম পাড়িয়ে ফেলে রেখে পালিয়ে যায়। জঙ্গলের মধ্যে একাকী দুই বোন ঘুম ভেঙে খুব কাঁদতে থাকে। তখন তারা জঙ্গলের হিংস্র জীবজন্তু থেকে ভয়ে কাঁদতে কাঁদতে একটি বটগাছের কাছে গিয়ে হাতজোড় করে দুজনে বলে, “হে বটবৃক্ষ মা আমাদের দশ মাস দশ দিন গর্ভে স্থান দিয়েছে। তুমি আজ রাতের জন্য তোমার কোটরে স্থান দাও।” এরপর সেই বট বৃক্ষ দুভাগ হয়ে গেলে তারা দুই বোন বটগাছের সেই কোটরে রাত কাটায়।পরের দিন সকালে তারা বটগাছ কে প্রণাম করে হাঁটতে শুরু করে। বেশ কিছুদূর যাওয়ার পরে তারা দেখতে পায় মাটির সরা করে কতগুলো মেয়ে পূজা করছে। উমনো আর ঝুমনো দুই বোন পূজার বিষয়ে তাদেরকে জিজ্ঞাসা করলে সেই মেয়েরা জানায় সেই পূজার নাম ইতু পূজা

ইতু পূজা সমাপন ও ঘট বিসর্জন পদ্ধতি

মেয়েরা আরও বলে যে আগের দিন উপোস করে থাকলে তবেই এতো পূজা করা যায়। এই কথা শুনে উমনো আর ঝুমনো বলে যে কাল থেকে তারা কিছুই খায়নি। তারাও কার্তিক মাসের সংক্রান্তিতে এত পুজো শুরু করতে পারবে আর তারা শুরুও করে দেয়। তাদের ভক্তি দেখে ইতু দেবী অর্থাৎ মিত্র দেব বর প্রার্থনা করতে বলে তাদের। তারা তাদের পিতার অভাব যেন দূর হয় এই বর প্রার্থনা করে। সূর্যদেব অথবা ইতু দেবী তাদের আশীর্বাদ করেন তারপর তারা অগ্রহায়ণ মাসের প্রতি রবিবার ভক্তি সহকারে ইতি পূজা করে এবং সূর্যদেবের কাছে থেকে আশীর্বাদ পেতে থাকে।

এমন ভাবে চলতে চলতে ঐ দিকে আশ্চর্যজনক ভাবে ব্রাহ্মণের ঘর ধন-সম্পদে ভরে ওঠে। কিন্তু তার স্ত্রী কোনভাবেই খুশি নয়, তার মুখের হাসি যেন উড়ে গিয়েছে। মেয়েদের কথা ভেবে ভেবে চোখের জল ফেলে এই ব্রাহ্মণের স্ত্রী। সত্যিই একদিন উমনো আর ঝুমনো বাড়ি ফিরে আসে। ব্রাহ্মণের স্ত্রী মেয়েদের দেখে খুব খুশি হয়ে পড়ে। বাড়ি ফিরে তারা ইতু পূজার কথা বললে আর সূর্যদেবের আশীর্বাদে যে তাদের পরিবারে উন্নতি হয়েছে সেটাও কিন্তু তার মাকে জানায়। তাই শুনে ব্রাহ্মণের স্ত্রীও ইতু পূজা শুরু করে দেয়। তখন থেকেই এই ইতু পূজার কথা চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে আর এর মাহাত্ম্য ছড়িয়ে পড়ার সাথে সাথে গ্রাম বাংলায় এই পূজার প্রচলন আজও পর্যন্ত বিদ্যমান।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!