Worldwide Bengali Panjika

পোঙ্গল উৎসব (তামিলনাড়ু) – Pongal Festival (Tamil Nadu)


পোঙ্গল উৎসব (Pongal Festival): তামিলনাড়ুতে এই উৎসবটি খুবই জনপ্রিয় একটি উৎসব। পোঙ্গল উৎসব নামে এই উৎসবটি এখানকার মানুষের কাছে অনেকখানি আবেগ। অত্যন্ত জাঁকজমকপূর্ণভাবে এবং আড়ম্বরের সাথে পালিত হয় এই উৎসবটি। এটি এমন একটি উৎসব যা ফসল কাটার সাথে যুক্ত এবং স্থানীয়দের জন্য বছরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা গুলির মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ, মনে রাখার মত ঘটনা।

WhatsApp প্রতিদিনের পঞ্জিকা নিজের হোয়াটসঅ্যাপে পেতে এখানে দেখুন (একদম ফ্রী)

এই সময় সকল তামিলনাড়ু বাসীরা তাঁদের ঘর সাজানো থেকে শুরু করে নতুন জামা কাপড় কেনা, উৎসবের আয়োজন করা, নতুন নতুন রান্না করা, তামিল পোঙ্গল শুভেচ্ছা বার্তা সকলের মাঝখানে ছড়িয়ে দেওয়া ও চারিদিকে আনন্দ, উৎসবের আমেজ তৈরি করাই হল এই উৎসবের মূল উদ্দেশ্য।

পোঙ্গল উৎসব:

বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে এবং যে সমস্ত জায়গায় কৃষি কাজকে প্রধান জীবিকা হিসেবে মনে করা হয় সেই সমস্ত জায়গাতে এবং তামিলনাড়ুর বিভিন্ন কৃষি প্রধান এলাকা গুলিতে কৃষকদের অন্যতম বড় উৎসব হল এই পোঙ্গল উৎসব।

পোঙ্গল এমন একটি সময় যখন তাঁরা মাঠে তাঁদের সমস্ত কঠোর পরিশ্রমকে কাজে লাগিয়ে শস্য ফলান এবং সেই শস্য ঘরে তোলার আনন্দ সকলের মাঝে ভাগ করে নেন। বাঙালির নবান্ন উৎসবের মতোই অনেকটা বলা যেতে পারে, তবে এই উৎসবে বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়ে থাকে, এই উৎসব উপলক্ষে মেলাও বসে। পোঙ্গল উৎসব চার দিনের একটি উৎসব, প্রতিটি দিন একটি বিশেষ তাৎপর্য বহন করে।

তো চলুন তাহলে পোঙ্গল উৎসবের চারটি দিনের উৎসব সম্পর্কে জানা যাক:

১) পোঙ্গল উৎসবের প্রথম দিন, ভোগী পোঙ্গল:

এই দিনটি ফসল কাটার মৌসুমের জন্য বৃষ্টির দেবতাদের ধন্যবাদ জানানো হয় এবং হিন্দু পুরাণে বৃষ্টির দেবতা এবং মেঘের শাসক ভগবান ইন্দ্রিয়ের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর জন্য এই দিনটি বিশেষভাবে নিবেদন করা হয়। এই শুভদিনে সকল মানুষেরা তাদের ঘর বাড়ি পরিষ্কার করার সাথে সাথে সুন্দর করে সাজিয়ে রাখেন।

এটি শুধুমাত্র আশেপাশের একটি ভালো পরিচ্ছন্নতাকে বজায় রাখে না তার সাথে সাথে মানুষের মধ্যে ইতিবাচক ভাবনাকেও জাগ্রত করে। এর পাশাপাশি বাড়িতে কোনরকম নেতিবাচক শক্তির প্রবেশ ঘটে না।

এই দিন বাড়ির প্রবেশদ্বারে আকর্ষণীয় বিভিন্ন ধরনের নকশা তৈরি করা হয় যা রঙ্গোলি নামে অনেকেই জানবেন, এছাড়া পরিবার গুলি সন্ধ্যার সময় “ভোগী মন্তলু” অনুষ্ঠান করে থাকেন। এছাড়া বিভিন্ন আচার অনুষ্ঠানের পাশাপাশি কম বয়সী মেয়েরা ভগবান ইন্দ্রের প্রশংসায় স্তব করতে থাকেন এবং আগুনের চারপাশে নাচ করতে থাকেন।

২) পোঙ্গল উৎসবের দ্বিতীয় দিন, সূর্য পোঙ্গল:

এই দিনটিও বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ, এই বিশেষ দিনে প্রধান আচার অনুষ্ঠান হিসেবে মহিলারা চারপাশে জড়ো হন এবং বাইরে বিশেষ পোঙ্গল পদ রান্না করা হয়ে থাকে। মাটির পাত্রে চাল এবং দুধ এক সাথে সেদ্ধ করে তৈরি করা হয় এই পদ। এটি সূর্য দেবতা অথবা ভগবান সূর্যের উদ্দেশ্যে নৈবেদ্য হিসেবে নিবেদন করা হয়।

যে মাটির পাত্রে এটি প্রস্তুত করা হয় তা প্রায়শই খুব সুন্দর করে সাজানো থাকে, রান্না করার সময় পাত্রের চারপাশে হলুদের পাতা বা মালা দেখতে পাওয়া যায়। সূর্যদেবকে আরো যে সমস্ত নৈবেদ্য অর্পণ করা হয় সেগুলির মধ্যে রয়েছে কলা, নারকেল, আঁখ প্রভৃতি। অন্যদিকে পুরুষদেরকে আরও অন্যান্য আচার অনুষ্ঠান পালন করতে দেখা যায়।

যার মধ্যে সূর্য নমস্কার করার সময় পবিত্র মন্ত্র পাঠ করতে হয়। এর পাশাপাশি পোঙ্গল পদ রান্না হয়ে গেলে এটি দেবতাদের, প্রধানত ভগবান সূর্য এবং প্রভু গণেশকে নিবেদন করা হয় এর পাশাপাশি কখনো কখনো ষাঁড় এবং বলদ কেও খাওয়াতে হয়।

৩) পোঙ্গল উৎসবের তৃতীয় দিন, মাত্তু পোঙ্গল:

মাত্তুর অর্থ হল গরু এবং পোঙ্গল উৎসবের তৃতীয় দিন এটিকে উৎসর্গ করা হয়। আর তেমনি গরু কৃষক এবং তাঁদের পরিবারকে দুধ দেয়, জ্বালানি দেয় এবং ষাঁড় ও বলদ ক্ষেতে চাষ করতে সহযোগিতা করে, নাঙ্গল টানতে সহযোগিতা করে, ফসল কাটা ও মাড়াই এর কাজে আসে তারা।

এই তৃতীয় দিনটি উদযাপনের মধ্যে রয়েছে গরু ও ষাঁড় কে ঘণ্টা দিয়ে সাজানো এবং তাদের গায়ে রং লাগানো। তাদের বিভিন্ন ধরনের রঙিন পুঁথি ও হলুদ জল দিয়ে পূজা করা হয় এবং তাদের গলায় ফুলের মালা পরানো হয়। যার ফলে তাদের বিশেষ, গুরুত্বপূর্ণ এবং তামিল পোঙ্গল শুভেচ্ছা জানানো হয়।

এর পাশাপাশি এই তৃতীয় দিনের আরও একটি মজার বিষয় হলো গরু ও গবাদি পশুকে পোঙ্গল খাওয়ানোর পর শহরের কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়। সব সময়ই নয়, তবে পুরুষরা তাঁদের ষাঁড়ের প্রতিযোগিতায় অংশ নেন এবং রাস্তায় আনন্দ, উচ্ছ্বাস, উৎসাহ উদ্দীপনার সাথে অনেক কিছু বাজনা বাজিয়ে এই উৎসব পালন করেন। এর পাশাপাশি গবাদি পশু গুলির আশেপাশে থাকতে পারে এমন কোন অশুভ শক্তি দূর করার জন্য বিশেষ একটি পূজা অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।

৪) পোঙ্গল উৎসবের চতুর্থ দিন, কানুম পোঙ্গল:

এই শেষ দিনে সমস্ত কিছু বন্ধ করা হয় এবং বন্ধু-বান্ধব এবং পরিচিত পরিবারের সাথে দেখা করা হয়। কানুমের অর্থ হলো ‘দেখা করা’, বা “মানুষের সাথে মানুষের পরিচিত হওয়া”। ঐতিহ্য অনুসারে তামিল পোঙ্গল শুভেচ্ছা জানিয়ে সকলের সাথে এবং কাছের প্রিয় মানুষদের সঙ্গে দেখা করতে যাওয়া। এই বিশেষ দিনে কানু পিঁড়িও তৈরি করা হয়।

এটি একটি ঐতিহ্যবাহী দক্ষিণ ভারতীয় রীতি, এতে হলুদের পাতা ধুয়ে মাটিতে রাখা হয় তারপরে সমস্ত অবশিষ্ট পোঙ্গল এবং আগের দিনগুলিতে নৈবেদ্য হিসেবে ব্যবহৃত আরও অন্যান্য খাবারগুলি এই হলুদ পাতা গুলিতে দিয়ে বাইরে রেখে দেওয়া হয়। এটি করা হয় মূলত পাখিদের খাওয়ানোর জন্য ও এই পরিবেশকে সুন্দর করে তোলার জন্য পাখিদের ধন্যবাদ জানানো হয়।

এই কাজটি বাড়ির মহিলাদের দ্বারা করা হয়ে থাকে আর ঝরনা অথবা ধুয়ে যাবে না এমন জায়গাতে খুব সকালে এটি করতে হয় যার ফলে পাখিরা সুন্দরভাবে কোন বাধা ছাড়াই খেতে পারে।

পোঙ্গল উৎসবের তাৎপর্য:

তামিল রাজ্যে এই উৎসবের অনেক গুরুত্ব রয়েছে। সেখানে গাঁয়ের মানুষজন এই উৎসবকে খুবই শ্রদ্ধা ও ভক্তির সাথে পালন করেন। সেখানে জানুয়ারি মাসকে ‘থাই মাস’ বলা হয়, আর তামিলিয়ানদের দৃঢ় বিশ্বাস যে এই মাসটি তাঁদের জন্য অনুকূল। এই মাসে নতুন শস্য তোলা হয়, তাঁদের জীবনকে ইতিবাচক ভাবনা দিয়ে ভরিয়ে তোলে প্রকৃতি। তাঁদের জীবনের সমস্যা গুলি অদৃশ্য হয়ে যায়।

এমন বিশ্বাস অনুসারে এই উৎসব পালন হয়ে আসছে বহু বছর আগে থেকে। এই মৌসুমে হলুদ, ধানের মতো ফসল, আখ এগুলি কাটা হয়। তামিল মানুষেরা এই মাসটিতে বিবাহ, ব্যবসা এবং সমস্ত ধরনের আধ্যাত্মিক কার্যকলাপের জন্য অত্যন্ত শুভ বলে মনে করেন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!