দুর্বাষ্টমী ব্রত (Durvastami Vrat): সমস্ত রকম ব্রত পালনের ক্ষেত্রে বেশিরভাগ সময়ে মহিলারাই এই সব ব্রত পালন করে থাকেন। ভাদ্র মাসের শুক্ল পক্ষের অষ্টমী তিথিতে এই ব্রত পালন করতে হয়। আর সকল মহিলাদেরকেই এই ব্রত পালন করতে হয়।
বিবাহিত মহিলারা এই ব্রত পালন করে থাকেন। বংশের উন্নতি এবং সৌন্দর্য, সমৃদ্ধি, শান্তির জন্য এই ব্রত পালন করা হয়। দুর্বাষ্টমী এটি হলো একটি অনন্য হিন্দু ব্রত পালন যা দুর্বা ঘাসের উপাসনার জন্য নিবেদিত করা হয়, প্রায় সমস্ত হিন্দু আচার অনুষ্ঠানে ব্যবহৃত একটি অপরিহার্য অংশ হল দুর্বা ঘাস।
দূর্বাষ্টমী ব্রত পালনের উপকরণ:
এই ব্রত পালন করার জন্য যে সমস্ত উপকরণ গুলি প্রয়োজন পড়বে সেগুলি হল:-
- ফল,
- ফুল,
- নৈবেদ্য,
- হরিতকি,
- মিষ্টান্ন,
- খেজুর,
- নারকেল,
- আঙ্গুর,
- ডালিম,
- বেদানা,
- কমলালেবু,
- ধুপ,
- ধুনা,
- প্রদীপ,
- আট রকম ফল ইত্যাদি।
- এই ব্রত শেষ করে বংশবৃদ্ধি হওয়ার কামনা করতে হয়।
- এই ব্রত পালনের সময় ব্রাহ্মণকে পৈতে দান করতে হয়।
- টাকা পয়সা দান করতে হয়, হরিতকী, মিষ্টি প্রভৃতি দান করার কথা উল্লেখ রয়েছে।
দূর্বাষ্টমীর ব্রতকথা:
একসময় শ্রীকৃষ্ণ রাজা যুধিষ্ঠিরের কাছে এই ব্রত কথা বলেছিলেন, তখন সমুদ্র মন্থন করা হয়। সেই সময় স্বয়ং নারায়ণ নিজের হাত আর উরুর সাহায্যে মন্থর পর্বতকে ধরে থেকে সমুদ্র মন্থন করেছিলেন।
মন্দর পর্বতের সঙ্গে ঘষা খাওয়ার ফলে তাঁর দেহের লোমগুলো খসে খসে সমুদ্রের জলে পড়েছিল। আর সেই লোম গুলো ভাসতে ভাসতে সাগরের তীরে পৌঁছে দুর্বা ঘাস হিসাবে জন্ম নেয় পৃথিবীতে। আবার দেবতা আর অসুরেরা যখন অমৃত সংগ্রহ করার জন্য সমুদ্র মন্থন করেন সেই সময় দুর্বা ঘাসের উপর কয়েক ফোটা অমৃত পড়েছিল।
তারপরে দুর্বা দেবতাদের অতি প্রিয় আর অমর হয়েছিল। আর সেই কারণে ভাদ্র মাসের শুক্লপক্ষের অষ্টমীতে খেজুর, নারকেল, আঙ্গুর, ডালিম, বেদানা, হরিতকি, কমলালেবু, প্রভৃতি ফল, গন্ধ ফুল, ধুপ-প্রদীপ, নৈবেদ্য দিয়ে দুর্বা ঘাসের পূজা করতে হয়।
দুর্বাষ্টমী ব্রত পালনের শুভ ফল:
বহু প্রাচীন যুগে দেবতারা পার্বতী, সরস্বতী, রতি, গঙ্গা, অদিতি, দিতি, মন্দোদরী, চন্ডী, মায়া, দিপ্তা, দময়ন্তী, রেবতি, মেনকা, রম্ভা আর ঋষিদের মেয়েরা দুর্বা ঘাসের পূজা করতেন খুব শুদ্ধ মনে ভক্তির সাথে। নিয়ম অনুসারে দুর্বা ঘাসের পূজা করে ব্রাহ্মণকে ভোজ্য, কাপড়, ফল এবং দক্ষিণা দান করতে হয়।
পরবর্তীতে আত্মীয় স্বজনদের পরিতৃপ্ত করে ভোজন করিয়ে নিজে ভোজন করতে হয়। যে মহিলা সন্তান প্রাপ্তি বা বংশবৃদ্ধি ও সন্তানদের দীর্ঘজীবন পাওয়ার জন্য এই ব্রত করে থাকেন সেই মহিলা ইহলোকে স্বামী-পূত্র নিয়ে সুখে শান্তিতে দিন কাটান এবং মৃত্যুর পর শ্রীবিষ্ণুর চরণে আশ্রয় লাভ করেন।
ভাদ্র মাসে যে দুর্বাষ্টমী ব্রত পালন করে থাকবেন সংসারে তাঁকে কোনদিন দুঃখ ও শোক ভোগ করতে হবে না। সর্বদাই সুখে, শান্তিতে বসবাস করতে পারবেন এবং সংসারে উন্নতি হবে অবিরত।
দুর্বা ঘাসকে পবিত্র মানার কারণ:
প্রাচীনকাল থেকে সব দেবী মুনি সবাই এই দুর্বা ঘাসের পূজা তথা দুর্বাষ্টমী ব্রত পালন করে আসছেন। পুরান অনুসারে বর্ণিত আছে যে, দুর্বা ঘাসের জন্ম ভগবান বিষ্ণুর হাত ও উরুর লোম থেকে হয়েছিল।
লোমরাশি যখন সাগর মন্থনের সময় খসে গিয়ে সাগরের জলে ভাসতে ভাসতে সাগরের তীরে এসে উপস্থিত হয়, কিছু সময় পর তা সুন্দর হলুদ রং ধারণ করে খুব সুন্দর দুর্বা ঘাসে পরিণত হয়।
পবিত্র মানার আরও একটি কারণ হলো দুর্বা ঘাসের গোড়ায় থাকেন স্বয়ং ব্রহ্মা, দুর্বা ঘাসের মধ্যভাগে থেকেন স্বয়ং বিষ্ণু আর অগ্রভাগে থাকেন মহেশ্বর। তাই দুর্বা ঘাস দীর্ঘ জীবন ও উন্নতির প্রতীক। ভাদ্র মাসের কৃষ্ণ অষ্টমী কে দুর্বাষ্টমী হিসেবে পালন করা হয়। তাই এই দিনে দীর্ঘায়ু পাবার আশায় দূর্বা ঘাসের অগ্রভাগ পূর্বমুখী করে ভগবানকে উৎসর্গ করা হয়।