বাসন্তী চন্ডী পূজা (Basanti Chandi Puja): সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কাছে আচার অনুষ্ঠান, পূজা-অর্চনা বিভিন্ন ধারায় প্রবাহিত হয়ে আসছে প্রাচীনকাল ধরে। বেদের একটি ধারা বিবিধ উপনিষেধ যোগ্য কান্ডের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার মধ্যে অনেক পূজা অর্চনার ভিতর রয়েছে বসন্তের বাসন্তী চন্ডী পূজা। যে শক্তি জীবের অন্তরের শক্তিকে জাগ্রত করেন তিনি হলেন চন্ডী এবং তিনি হলেন বাসন্তিকা আর সেই শক্তি যখন দুর্গতিনাশ করেন তিনি হলেন দেবী দুর্গা, চন্ডী মার্কন্ডেয় ও পুরানের অন্তর্গত এই তথ্য জানা যায়।
এতে ৭০০ টি শ্লোক রয়েছে। তাই একে ‘সপ্তসতী’ নামে অভিহিত করা হয়েছে। আত্মার শক্তিকে জাগ্রত করার দিক নির্ণয় করা হয়েছে এবং সেই রূপ সাধনা না করলে সিদ্ধি লাভ সম্ভব নয়। দুঃখ, দারিদ্র্য, শোক, বেদনাময় পৃথিবীতে মূলত কেউ সুখী নয়। সুখ নামের কল্পিত পাখির কাছে আমার সবাই দৌড়ে দৌড়ে বেড়াচ্ছি কিন্তু সুখ কোথাও নেই। ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করে তার কাছে মাথা নত করে নিজের মনের সকল দুঃখ জানিয়ে মানুষ অনেকটাই নিজেকে দুঃখ থেকে নিজেকে মুক্ত করে রাখতে সক্ষম হয়।
আদিকাল থেকেই ভারতবর্ষের শক্তি সাধনার ধারা চলে আসছে ভারতবর্ষের বাইরে ও অনেক জায়গায় যেমন ধরুন কাতার তীব্র চীন জাভা ব্রহ্মদেশ জাপান এমনকি বৌদ্ধ ধর্মেও শক্তিপূজা বিশেষভাবে প্রচলিত। মাতৃ ভাবের সাধক রামপ্রসাদ শ্রী রামকৃষ্ণ বামাক্ষ্যাপা সর্বানন্দ ঠাকুর সাধু তারাচরণ শ্রীশ্রী লোকনাথ ব্রহ্মচারী ও তৈলঙ্গ ঠাকুর বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
বাসন্তী চন্ডী পূজার নিয়ম:
প্রথমত পঞ্চ উপাচার বা দশ উপাচার শ্রী শ্রী চন্ডী দেবীর পূজা (Shri Shri Chandi Devi Puja) করতে হবে। চন্ডী পূজা বিধি (Chandi Puja Vidhi) বাজারে প্রচলিত চন্ডী পুস্তক গুলিতে দেওয়া থাকে যা থেকে আপনি সহজেই এই পূজা বিধি জানতে পারবেন। যদি এত নিয়ম না মানতে পারেন তাহলে একটি ঘট স্থাপন করে ঘরে যেমন করে ফুল, বেলপাতা, জল, বাতাসা এবং সামান্য কিছু নৈবেদ্য দিয়ে পূজা করেন না কেন তার শুভ ফল পাবেন। তেমনি ভাবে আপনার মন মতো করে পূজা করতে পারেন, বাকিটা চন্ডী পাঠের মাধ্যমেই আপনার পূজা সম্পন্ন হবে।
ভাগে ভাগে চন্ডী পাঠ (Chandi Path) করলে প্রতিদিন পাঠের পর পঞ্জিকা স্তোত্র অবশ্যই পাঠ করতে হবে। তবে সব নিয়ম নিষ্কাম দেবী ভক্তদের জন্যই আর যাঁদের দেবী প্রীতি ও ভক্তি ছাড়া আর কিছু কামনা নেই তাঁদের জন্য। যে সমস্ত ভক্তরা বিশেষ ফল কামনায় চণ্ডীপাঠ করে থাকেন বা ঠাকুর দেবতার সঙ্গে সুন্দর একটা ভক্তিপূর্ণ সম্পর্ক রাখেন, তাঁরা সমস্ত নিয়ম মত এবং বিধি মেনে পূজা করে থাকেন এবং চন্ডিপাঠ করে থাকেন। দেবী দুর্গার এই এক রূপকে পূজা করা হয় ভক্তি সহকারে।
বাসন্তী চন্ডী পূজায় প্রয়োজনীয় উপকরণ:
এই ক্ষেত্রে দেবী দুর্গাকে উৎসর্গ করা হয় এই পূজা, সেক্ষেত্রে যা যা প্রয়োজন হবে সেগুলি হল:-
- মা দুর্গার ছবি,
- জাফরান,
- সিঁদুর,
- কর্পূর,
- ধুপ,
- কাপড়,
- আয়না,
- চিরুনি,
- সুগন্ধি তেল,
- চুড়ি,
- চৌকি,
- চৌকির জন্য লাল কাপড়,
- নারকেল,
- জলভরা ঘট,
- দুর্গা সপ্তসতী বই,
- আমের পাতা,
- ফুল,
- দূর্বাঘাস,
- মেহেন্দি,
- বিন্দি (টিপ),
- পাঁচ রকম শুকনো ফল,
- হলুদের পিণ্ড,
- সুপারি,
- বেলপাতা,
- ফুলের মালা,
- প্রদীপ,
- কুমকুম এবং সাজ এর বিভিন্ন জিনিসপত্র,
- লাল পতাকা,
- লবঙ্গ,
- এলাচ,
- বাতাসা বা মিছরি,
- আসল কর্পূর,
- ফল ও মিষ্টি,
- দুর্গা চালিসা ও আরতী বই,
- পরিষ্কার চাল,
- যজ্ঞের জন্য আমের কাঠ,
- ঘি,
- পান,
- সুতো ইত্যাদি।
বাসন্তী চন্ডী পূজার শুভ ফল:
পুরান মতে চন্ডী পাঠের বিধি অত্যন্ত কঠিন বলে মনে করা হয়, গীতা পাঠের মতো সহজসাধ্য নয়। এতে শ্লোকের সংখ্যা মোট ৭০০ টি রয়েছে। তবে যাঁরা এই চণ্ডীপাঠ করতে খুবই ভালোবাসেন তাঁদের কাছে এটি খুবই সহজ মনে হবে। বিশ্বাস করা হয় এই মন্ত্র জপ করলে জীবনের সমস্ত সমস্যার সমাধান হয়ে থাকে। চন্ডী পাঠ করা অথবা শ্রবণ করা খুবই শুভ ফলদায়ক। ভয় ও পাপ ধ্বংস, সংকট, আসুরিক শক্তি জয় করে সৌভাগ্য ও কল্যাণ সাধন হয় বলে জানা যায়।