কের পূজা: বিভিন্ন পূজা-পার্বনের মধ্যে কের পূজা হল একটি অন্যতম পূজা। কের পূজা ভারতের ত্রিপুরায় অনুষ্ঠিত একটি উৎসব। সাধারণত এই পূজায় বাস্তু দেবতার অভিভাবক দেবতার কেরকে সম্মান জানাতে খার্চী পূজার দুই সপ্তাহ পরে উদযাপনটি হয়ে থাকে। কাহিনী অনুসারে জানা যায় ত্রিপুরা রাজারা এই পূজার সূচনা করেছিলেন, হালাম উপজাতির জন্য পূজায় অংশগ্রহণ আবশ্যক, উৎসবের সময় আড়াই দিনের জন্য।
প্রতিটি জনজাতির মধ্যে বিভিন্ন ভিন্ন রীতি নীতি প্রচলিত রয়েছে। তাঁরা তাঁদের বিশ্বাস এবং যুক্তি দিয়ে বছরের পর বছর সেগুলি পালন করে আসছেন। ত্রিপুরার আদি জনজাতির মানুষ কের পূজা করে থাকেন। তাঁদের বিশ্বাস এই পূজা মূলত রোগ ব্যাধি দূর করতে এবং শত্রুর নজর থেকে নিজেদেরকে বাঁচাতে সাহায্য করে।
সর্বপ্রথম রাজাদের আমলে রাজ কোষাগারে এই পূজা করা হতো। পরবর্তীতে পুরাতন আগরতলার চতুর্দশ দেবতা মন্দিরের পূজা শুরু করা হয়। এখনো পর্যন্ত সেখানেই প্রতিবছর কের পূজা অনুষ্ঠিত হয়। চতুর্দশ দেবতা মন্দিরের বাৎসরিক উৎসব যা খারচি উৎসব নামে পরিচিত। সেটি সমাপ্ত হওয়ার এক সপ্তাহ পরেই কের পূজার আয়োজন শুরু হয়ে যায়।
কের পূজা ও এই পূজার বিশেষত্ব:
বলা হয় যে যিনি কের পূজা করে থাকেন তাঁকে বলা হয় ‘চন্তাই’। এই কের পূজা মূলত একটা গণ্ডি কে কেন্দ্র করে অনুষ্ঠিত হয়। পূর্বে আগরতলা শহর জুড়ে কের পূজার গণ্ডি দেওয়া হত। গণ্ডি আঁকা সম্পন্ন হলে তবেই পূজা শুরু করা হতো। যাঁরা একবার গণ্ডির মধ্যে প্রবেশ করতেন তাঁরা দুদিনের জন্য এই কের পূজা শেষ না হওয়া পর্যন্ত গণ্ডির বাইরে বের হতে পারতেন না।
কথিত আছে যে, কের পূজার এই গণ্ডির মধ্যে নাকি কোন মানুষের জন্মও হয়না এবং কোন মানুষের মৃত্যুও আসে না, তাই এই গণ্ডির ভেতরে কখনো কোন গর্ভবতী মহিলা কিংবা অতি বৃদ্ধ মানুষকে আসতে দেওয়া হয় না। তবে এখন এই পূজার পরিসর অনেকটা ছোট করে দেওয়া হয়েছে। সামান্য জায়গা জুড়ে নির্দিষ্ট গণ্ডি এঁকে দেওয়া হয়, সেখানেই দুদিন ধরে চলে এই কের পূজা।
এই পূজার বেশ কিছু রীতিনীতি প্রচলিত রয়েছে, যেমন ধরুন পুজো শুরুর আগের দিন এবং পূজো শুরু হওয়ার দিন কোথাও কোন বাড়িতে আগুন জ্বালানো উচিত নয়। পুজোর আগুন জ্বালানো হয় শুকনো বাসের সঙ্গে বাঁশ ঘষে, এরপরে সেই আগুন নিয়ে যাওয়া হয় বাড়িতে বাড়িতে। আগে যদিও বা প্রায় সব বাড়িতেই পুজোর আগুন নিয়ে যাওয়ার রীতি ছিল, কিন্তু এখন সব বাড়িতে না হলেও আগরতলার বেশ কিছু বাড়িতে আগুন নিয়ে যাওয়ার রীতি প্রচলিত রয়েছে।
এক কথায় ‘কের’ কথার অর্থ হলো “সীমানা অথবা গণ্ডি”। রাত দশটা থেকে কের পূজার শুভারম্ভ শুরু হয়ে যায়। রাতে অধিবাসের পর সকাল থেকে পূজা শুরু হয় রাজ পুরোহিত দিয়ে। জাতী ও উপজাতির মিলনের পূজা হলো কের পূজা। তবে আমরা আগেই জেনেছি যে এই কের পূজার গণ্ডির মধ্যে সবাই প্রবেশ করতে পারেন না। কের পূজা মানে চতুর্দশ দেবতারই পূজা, অত্যন্ত শ্রদ্ধা, ভক্তি ও নিষ্ঠার সঙ্গে বিধি-নিষেধ মেনে এই পূজা সম্পন্ন করতে হয়।